ঢাকা , সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​টিকাবঞ্চিত হচ্ছে দেশের ১৬ শতাংশ শিশু

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৩-০২-২০২৫ ০৪:৪৫:৫০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৩-০২-২০২৫ ০৪:৪৫:৫০ অপরাহ্ন
​টিকাবঞ্চিত হচ্ছে দেশের ১৬ শতাংশ শিশু ​ছবি: সংগৃহীত
টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে ভ্যাকসিন-প্রতিরোধযোগ্য রোগ (ভিপিডি) নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট অগ্রগতি ও অর্জন থাকলেও গত প্রায় ১২ বছর যাবৎ একই বৃত্তে আটকে আছে বাংলাদেশ। এই সময়ের মধ্যে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) মাধ্যমে দেশে টিকাদান অব্যাহত থাকলেও কোনোভাবেই ইপিআই কভারেজ ৮৪ শতাংশের ওপরে উঠতে পারছে না দেশ। এর ফলে এখনও দেশের ১৬ শতাংশের বেশি শিশু টিকা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি এই কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি অবহেলা দেখা গেছে শহরকেন্দ্রিক টিকাদানে।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশর যৌথ আয়োজনে 'বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়' শীর্ষক পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন, গবেষণা প্রধান এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কভারেজ ছিল ২ শতাংশের নিচে, যা বর্তমানে ৮৩.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে গ্রাম শহর নির্বিশেষে এই কাভারেজে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে। টিকা কর্মসূচিতে শহরকেন্দ্রিক কার্যক্রমে ব্যাপক অবহেলা দেখা গেছে।

কার্যক্রম থাকলেও উন্নতি না থাকার প্রধান কারণে হিসেবে জনবলের ঘাটতির কথা তুলে ধরে ডা. মনিজা উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ইপিআই কর্মসূচির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে টিকা কার্যক্রমে জনবলের ঘাটতি। এছাড়াও অঞ্চলভিত্তিক টিকাকেন্দ্রের অসম বণ্টন, অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, টিকার অপর্যাপ্ততা, টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব, দুর্গম এবং, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহনজনিত সমস্যা, টিকাদান সম্পর্কিত প্রচারণার অভাবসহ নানা সমস্যা রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পদ এবং ইপিআই সদর দপ্তরে ৪৩ শতাংশ পদ এখনও শূন্য রয়েছে। এছাড়া বরাদ্দকৃত জনসংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম, কারণ আরবান ইমিউনাইজেশন স্ট্র্যাটেজি-২০১৯ এবং ইপিআই মাইক্রোপ্ল্যান-২০২৪ অনুসারে প্রতি পঞ্চাশ হাজার জনসংখ্যার জন্য ৬ জন টিকাদানকর্মী প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

গবেষণা প্রধান আরও জানান, গবেষণায় দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুসারে টিকাদান কেন্দ্রের অসম বণ্টন লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যে সংখ্যায় টিকাদান কেন্দ্র থাকা দরকার সেই সংখ্যক টিকাদান কেন্দ্র নেই। টিকাদান কর্মসূচি সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বাজেট বরাদ্দে দেরি হচ্ছে। এছাড়া ৫ম হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশন সেক্টর প্রোগ্রাম এখনও অনুমোদিত হয়নি। এর ফলে টিকা ক্রয়, টিকা পরিবহণ এবং বণ্টনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২০২৯ সালের পর গ্যাভি টিকাদান প্রকল্পে সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সরকারকে নিজস্ব অর্থায়নে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। সেজন্য সরকারকে অন্তত ৪০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রয়োজনে শহর অঞ্চলের টিকাদান কার্যক্রম স্বাস্থ্যের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। যে ১৬ শতাংশ শিশু টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তাদেরকে যেকোনো মূল্যে টিকার আওতায় আনতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে টিকাদান পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে। 

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বলেন, স্বাস্থ্যের অন্যান্য সব প্রোগ্রামের সঙ্গে টিকা প্রোগ্রামকে মিলিয়ে দেখলে হবে না। এটাকে অবশ্যই আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এটি জীবন রক্ষাকারী একটি জিনিস। শিশুদের টিকা কার্ড সহজলভ্য করতে এখনকার ম্যানুয়াল ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রামকে ডিজিটাল করতে হবে।

এসময় গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির উচ্চ কভারেজ নিশ্চিত করা এবং ইপিআই প্রোগ্রামকে আরও বেগবান করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত উক্ত গবেষণা প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।

বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ